বিশ্ব জুড়ে সরকার প্রধানরা এখন (কোভিড–১৯) মোকাবেলায় ব্যাস্ত । এখন পর্যন্ত ১৮৩টি দেশে আড়াই লাখের অধিক মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১১ হাজার।
ওদিকে বিজ্ঞানীরাও জোরেশোরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এর ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য। চেষ্টার সুফলও ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বরাতে জানা গিয়েছে, এই ভাইরাস ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে ২০টি ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও শুরু হয়ে গেছে।
WHO কর্মসূচির টেকনিক্যাল লিড মারিয়া ভ্যান কেরখোভে বলেছেন, তাদের যতটুকু সামর্থ্য তার চেয়েও দ্রুত এগোতে পেরেছেন। অবশ্য এতো দ্রুত আবিস্কারের পিছনে তাদের পুর্ব অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দিয়েছে।
সার্স ও মার্সের মতো মহামারীর সময়ই বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন । সেই অভিজ্ঞতাই আজ তাদেরকে এতো দ্রুত সময়ে ভ্যাকসিন আবিস্কারে সাহায্য করছে । এবং এর পাশাপাশি চীন অতিদ্রুত কোভিড-১৯-এর জিনেটিক সিকোয়েন্স আবিস্কার বিজ্ঞানীদের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছেন ।
তবে বলে রাখা ভাল একে জনসাধারনের ব্যবহারের উপযুক্ত করতে অন্তত ১ বছর বা তারো বেশি অপেক্ষা করতে হবে। কারন, একটি খারাপ ভাইরাসের তুলনায় একটি খারাপ ভ্যাকসিন আরও ভয়ংকর হতে পারে মানুষের জন্য। আর একটি সফল প্রতিষেধক বের করে আনাটা বেশ জটিল এবং সময়সসাধ্য কাজ।
উদাহারন হিসেবে বলা যেতে পারে, ২০০৯-১০ এ যখন সোয়াইন ফ্লুর জন্য প্রায় ষাট লাখ মানুষকে গ্লাক্সোস্মিথক্লেইনের পানডেমরিক্স ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছিল তখন ভ্যাকসিনটি নেয়ার পর একজন মানুষ দিনে অনেক বার ঘুমিয়ে যেতেন অর্থাৎ স্লিপিং ডিজঅর্ডার সমস্যায় আক্রান্ত হতো। তাই এই ভ্যাকসিন টি বাজার থেকে পরবর্তীতে উঠিয়ে নেয়া হয়।
আবার আরও একটি উদাহারন হিসবে বলা যেতে পারে, ১৯৭৬ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা ইবোলা ভাইরাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন । পশ্চিম আফ্রিকায় ২০১৪ সালে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরে এবং ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটায় । যার ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে ২০১৯ এ ।
আর বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবী জুড়ে শত কোটি মানুষের জন্য এই ভ্যাকসিন তৈরি করাটা আরও এক বড় চ্যালেঞ্জ । আর যদি তৈরি করাও যায় তবে তখন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বাঁধারও মুখোমুখি তাদের হতে হবে । কারন এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে তখন পুরো পৃথিবীর মানুষকে এই ভ্যাকসিন দিতে হবে । এবং সবাইকে এই প্রতিষেধক দেয়া এবং রাজি করানোর কাজটাও কঠিন।
তবে আরও একটি আশা জাগানিয়া খবরও ইতিমধ্যে চীন বিশ্বকে জানিয়েছে। চীনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য জাপানে ব্যবহৃত এক ধরনের ওষুধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চীনে কার্যকর হয়েছে ।

জাপানের ফুজিফিল্ম কোম্পানির ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তৈরি এই প্রতিষেধক উহান ও শেনজেন শহরে করোনায় সংক্রমিত ৩৪০ জন রোগীর ওপর প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গিয়েছে। এই ওষুধটি যাদের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে তারা ৪ দিনের মধ্যেই সবাই সুস্থ হয়েছে উঠেছেন। এবং তাঁদের ফুসফুসের অবস্থাও ৯১ ভাগ সেরে উঠেছে।
অপরদিকে যাদের এই ঔষধটি দেয়া হয়নি তাদের সেরে উঠতে সময় লেগেছে ১১ দিন। এবং তাঁদের ফুসফুসের অবস্থার ৬২ শতাংশ উন্নতি ঘটেছে।
ইতিমধ্যে জাপানও এটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছেন। তবে জাপান জানিয়েছে যেসব রোগীর অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন তাদের জন্য এই ঔষধটি কার্যকর নয়। কিন্তু স্বল্প সংকটাপন্ন রোগীর পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই ঔষধ টি মোটামুটি ভাবে কার্যকর হচ্ছে।
যাইহোক, বর্তমানে করোণাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে টানা তিনদিন কোনো ভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। সেখানকার জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এবং তা সম্ভব হয়েছে চীণের নজিরবিহীন কিছু পদক্ষেপের কারনে। যা আজ পুরো বিশ্বর জন্য এই ভাইরাস মোকাবেলায় প্রেরনা হিসেবে কাজ করছে। এবং তারাই সর্বপ্রথম ভাইরাসটির জেনেটিক কোড আবিস্কার করে তা বিশ্বাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে।