করোনা মহামারিতে পর্যদুস্ত বিশ্বকে আরো এক নতুন মহামারির সম্ভাবনার দুঃসংবাদ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা চীনে নতুন এক ভাইরাস চিহ্ণিত করেছেন যেটির মহামারিতে রূপ নেবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে শূকরের দেহে, কিন্তু ভাইরাসটির মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন তারা ভেবে উদ্বিগ্ন যে, নতুন ধরনের এই সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আরেকটি মহামারীর সূচনা করতে পারে।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
প্রসিডিংস অফ দ্যা ন্যাশানাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস সাময়িকীতে এই বিজ্ঞানীরা লিখছেন, শূকরের শরীরে এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নেয়া পদক্ষেপ এবং শূকর পালন শিল্পের কর্মীদের নজরদারিতে রাখার প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করা উচিত।
ভাইরাসটির মহামারী হবার সম্ভাবনা কতোটুকু ?
সারা বিশ্ব যে মুহূর্তে করোনাভাইরাসকে বাগে আনতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন বিজ্ঞানীরা সেসব ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস খোজে ব্যাস্ত যেগুলো সংক্রমণের ক্ষেত্রে বড়ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
চীনে খোজ পাওয়া নতুন এই ভাইরাসের সাথে ২০০৯-এ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পরা এইচ১এন যা সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস নামে পরিচিত তার সাথে মিল রয়েছে। তবে এই নতুন ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য কিছুটা আলাদা।
গবেষকরা নতুন এই ভাইরাসটির নাম দিয়েছেন জি৪ ইএ এইচ১এন১ (G4 EA H1N1)। জি৪ ইএ এইচ১এন১ নামক নতুন এ ভাইরাস জিনগতভাবে এইচ১এন১ স্ট্রেনেরই বিবর্তিত রূপ।
২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনের ১০টি প্রদেশের কসাইখানা এবং একটি পশুচিকিৎসার হাসপাতাল থেকে প্রায় ৩০ হাজার শূকরের লালারস সংগ্রহ করেন বিজ্ঞানীরা। সেখান থেকে ১শ’ ৭৯টি সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের সন্ধান পান তারা। কিন্তু জি৪ এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর কারন এটি মানব কোষে প্রতিলিপি তৈরি করতে সক্ষম এবং মানুষের শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে বেড়ে উঠতে এবং বিস্তার ঘটাতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, এ ভাইরাসটি সম্প্রতি সেইসব মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন যারা চীনের শূকর পালন শিল্প এবং কসাইখানাগুলোর কাজের সাথে জড়িত ছিলেন।
গবেষণা অনুসারে, চীনে শূকরের মাংস বিক্রেতাদের ১০.৪ শতাংশ ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এমনকি ৪.৪ শতাংশ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে এই সংক্রমণ। তাই এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে এখনই যদি এই সংক্রমণের দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া যায় তাহলে এটিও ভবিষ্যতে বড় মহামারির আকার ধারণ করার ক্ষমতা রাখে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে আবিষ্কৃত যেসব ফ্লু ভ্যাকসিন রয়েছে, তা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেয় না। যদিও তারা এটাও বলছেন প্রয়োজন হলে এই ভ্যাকসিনকে উপযোগী করে নেয়া সম্ভব।
ব্রিটেনের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক কিন-চোও চ্যাং এর ভাষ্যমতে “এই মুহূর্তে আমাদের সবার দৃষ্টি করোনাভাইরাসের দিকে এবং সেটাই হওয়া উচিত। কিন্তু নতুন এই ভাইরাসও একটা সম্ভাব্য বিপদজনক ভাইরাস। এটার দিক থেকে দৃষ্টি সরানো আমাদের উচিত হবে না।”
নতুন ভাইরাস এই মুহূর্তে সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ালেও, তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে “এটাকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না।”
মহামারি তাকেই বলা যায়, যখন কোন নতুন ধরনের একটা জীবাণু আত্মপ্রকাশ করে এবং তা সহজে ও দ্রুত একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু চিকিৎসা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জেমস উড বলছেন
“এই গবেষণা আমাদের এটাই স্বরন করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা সবসময়ই নতুন জীবাণুর জন্ম নেয়ার ঝুঁকির মধ্যে বাস করছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খামারের পশুর শরীরেই মহামারি হয়ে ওঠার মত সম্ভাবনাময় ভাইরাস জন্ম নিচ্ছে। এবং মানুষকে যেহেতু পশু খামারে কাজ করতে হয় আর সেখানে মানুষকে পশুর খুব কাছাকাছি সংস্পর্শের মধ্যে থাকতে হয়, তাই এই ভাইরাসগুলো পশুর শরীর থেকে মানুষের শরীরে ঢোকার আশংকা থেকেই সবসময়ে এধরনের মহামারির একটা বড় ঝুঁকি তৈরি হয়”